বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

জীবনের এক্সিবিশানে

পার্কের বসে আছে শুভ্র আর হাসিন।শুভ্রের হাতে মোবাইল ।সে মোবাইলে প্রচন্ড মনোযোগ সহকারে SNAKE গেমটা খেলছে । আর গেমটি সে সাউন্ড অন করে খেলছে ।হাসিন খুব বিরক্ত হচ্ছে তাও না ।
কারন সে ব্যাপারটার সাথে অভ্যস্ত । মানুষের সহজাত স্বভাব হল একটা অস্বাভাবিক ঘটনা বার বার দেখলে সেটা স্বাভাবিক লাগে ।
হাসিন ফাইন আর্টসের স্টুডেন্ট । আঁকাআঁকি তার পড়ার বিষয় না মিশে আছে ক্রোমোজোমে ।
...
চুপচাপ বসে বসে একটা স্কেচ বানাতে শুরু করে হাসিন ।শুভের লম্বা আর এলোমেলো চুলগুলো সামনে এসে গেছে । খেলায় সে খুব চিন্তিত ও অন্যমনস্ক থাকায় স্কেচটা বেশ ভালো হয়েছে ।
পাশে রাখা প্যাকেটটা ধরে রাখে হাছিন।
অপেক্ষা করতে থাকে কখন শুভ্র এদিকে নজর দিবে ।
এক বছর আগেঃ
ছবির গ্যালারীতে একটা এক্সিবিশানে জীবনের আঁকা প্রথম ছবি দিয়েছিলো হাসিন।
ছবিটার নামঃ জল পরী ।
ছবিটায় একটা মেয়ে নদীর পানিতে হাত ডুবিয়ে বসে আছে ।
জলের প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে । মেয়েটার চোখে অবাক শূন্যতা ।
হঠ্যাত্‍ খেয়াল করলো একটা ছেলে আধাঘন্টা ধরে ছবিটা দেখছে । কাছে গিয়ে কারন জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে বের হলোঃ ছেলেটি ছবিটা নিয়ে গল্প লিখছে । অর্ধেক গল্পটা লেখা হয়ে গেছে ।
কিন্তু খানিকবাদে ছবিটা বিক্রি হয়ে যায় । ছেলেটা অসহায়ের মত চেয়ে থাকে ।
দেখেই খারাপ লাগে হাসিনের ।
হাসিন পরিস্হিতি হালকা করতে গিয়ে ফোন নাম্বার চেয়ে নেয় ।
আর বলে দেয় একটা ছবি এঁকে পাঠিয়ে দিবে ।
সেই থেকে শুরু । ছেলেটা ফোন দিতেই হাজির । পথে বিপথে ছবি আঁকার সঙ্গী ।
ইতিমধ্যে শুভ্র তার পাশে একটা প্যাকেট রেখেছেঃ
লেখাঃ
ভালোবাসার একবছর পূরণ উপলক্ষ্যে উপহার । খুলতেই বের হলো পেন্সিল ।
আর হাছিন ধরিয়ে দিলো স্কেচ আর একটা প্যাকেট ।
প্যাকেটে একটা নতুন গ্যালাক্সী নোট ।
ছেলেটা লিখতে ভালোবাসে বলেই কিনেছে ।
একটা ধন্যবাদও দেয় না শুভ্র । নোটে কিছু টাইপ করতে শুরু করে । কিন্তু হাছিন একটু রাগ করে আজকে । কত সুন্দর করে গুছিয়ে শাড়ি পড়েছে ।
আর উনি ?
হঠ্যাত্‍ শুভ্রের বন্ধুরা আসে ।হাতে একটা বড় চিত্রকর্ম । প্যাকেটে মোড়ানো ।
বুক কাঁপতে থাকে হাসিনের ।
পাগলটা কার ছবি আনলো ?
প্যাকেট খুলতেই হাছিন আনন্দে কেঁদে ফেলেঃ
জল পরী !
চিত্‍কার করে ওঠে ।
আমার জন্য এত দারুন একটা সারপ্রাইজ প্লান ? ওয়াও ।
শুভ্র ভাবলেশহীন কন্ঠে বলেঃ
ছবিটা আমার ঘরে লাগাবো । আর আমার বৌকে পাশে নিয়ে ছবিটা দেখবো ।
হাসিন এটা তোর জন্য তো না !
হাসিন খানিকটা রাগ করেই উঠে যেতে ধরে ।শুভ্র হাত ধরে বলেঃ
আমাকে বিয়ে করে ফেলতে পারিস । কি আর করা ছবিটার যত্ন তো আর একা নিতে পারবো না ।
তোকে বিয়ে করবো কেন ? ঝাঁঝিয়ে ওঠে হাছিন ।
শুভ্র হেসে বলেঃ
করবি তো বটেই ! কারন আমার গল্পের বইয়ের বানান আর প্রচ্ছদের ছবি তোকেই ঠিক করতেই হবে । এত খরচ করতে গেলে অন্য কাউকে তো বিয়ে করতে পারবো না । আমায় দ্বায়মুক্ত কর ।
হাছিনও হেসে ফেলে শুভ্রের কথায় । বলেঃ আপনি দেখি রসিকতাও করতে শিখে গেছেন ।
আচ্ছা দেখি কি করা যায় , কিন্তু বৌ বলে যদি পারিশ্রমিক না দাও , খুব মাইর দিবো বলে দিচ্ছি ।
তারপর ছবিটা শুভ্রের ঘরে লাগিয়ে একসাথে বাইরে বের হয় দুজন ।
রাত নেমেছে । ওরা গ্রামে যাচ্ছে । জোছনা দেখতে ।
হঠ্যাত্‍ শুভ্র বলেঃ তুই আমার জলপরী । তোকে আমি অনেক ভালোবাসি ।
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে । কোলাহল থেমে যাচ্ছে । শুভ্রের কাঁধে মাথা রাখে হাসিন ।
কাঁপাকাঁপা হাতে শুভ্রও হাসিনকে ধরে রাখে ।
দুজনের জীবনে এত সুন্দর একটা জোছনা আগে আসেনি 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন